এনসিটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে : শাহজাহান চৌধুরী

10
   

নিজস্ব প্রতিবেদক,

এনসিটি বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান না হতো, তাহলে এতদিনে এই এনসিটি টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে চলে যেত।

রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত আমীর আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। একই পদ্ধতিতে এনসিটি টার্মিনালও বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার গভীর চক্রান্ত চলছে। যদি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান না হতো, তাহলে এতদিনে এই এনসিটি টার্মিনালটি বিদেশিদের হাতে চলে যেত। কিন্তু ফ্যাসিস্ট সরকার পালিয়ে গেলেও সরকারের বিভিন্ন স্থানে ঘাপটি মেরে থাকা লোকজন, বর্তমান সরকারকে বিভ্রান্তিমূলক বিভিন্ন তথ্য দিয়ে দেশের রাজস্ব খাত শেষ করার জন্য এবং দেশের সার্বভৌমত্বের উপর আঘাত হানার জন্য এনসিটি টার্মিনালকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তরে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগ চাই। দেশের উন্নয়নের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অপরিহার্য। কিন্তু সেই বিনিয়োগ হোক গ্রিন ফিল্ডে। যেমন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনোমিক জোনগুলোতে বিদেশিরা এসে বিনিয়োগ করছে। ঠিক তেমনি আমাদের বে-টার্মিনাল হতে শুরু করে সীতাকুন্ড-মিরসরাই ও মাতারবাড়িতে প্রচুর বিনিয়োগের সুবিধা রয়েছে। সেখানেই বিনিয়োগ আসুক। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরিকৃত টার্মিনাল কেন বিদেশিদের দেয়া হবে তা বোধগম্য নয়।

লিখিত বক্তব্যে শাহজাহান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ২৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালের অলাভজনক দেশবিরোধী চুক্তি বাতিল করে জি টু জি এর পরিবর্তে উন্মুক্ত দরপত্র আহবানের মাধ্যমে বন্দরের দক্ষ জনশক্তির কর্মসংস্থান অক্ষুন্ন রেখে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালনা করতে হবে। এতে করে দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের পরিবেশ তৈরি হবে এবং বন্দর প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জন করতে পারবে। দেশের টাকা বিদেশে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। পাশাপাশি পতেঙ্গা টার্মিনালের দেশ বিরোধী চুক্তি দেশের জনগণের কাছে উন্মোচন করতে হবে এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি দ্বারা চুক্তিটি পর্যালোচনা করতে হবে। অন্যথায়, শ্রমিক-ছাত্র-জনতা আবারও দেশ ও দেশের মানুষের ভবিষ্যতের জন্য যে কোনো কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

তিনি বলেন, এনসিটি টার্মিনাল বিদেশিদের কাছে গেলে বন্দরে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেবে। বিদেশিদের হাতে দেয়া হয়, তাহলে বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। সরকার বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা হতে বঞ্চিত হবে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে আঘাত হানবে। এনসিটিতে নিযুক্ত চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং ওই টার্মিনালে কর্মরত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ চাকুরিচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা বৈধভাবে বিদেশে চলে যাবে। পাঁচ হাজার কোটি টাকা মূল্যের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিগুলো হস্তান্তরে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষতি হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে। শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দেবে। বৈদেশিক বাজারে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে এবং বর্তমান কর্মরত দক্ষ শ্রমিকদের মাঝে হতাশা বাড়বে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, চট্টগ্রাম মহানগরী নায়েবে আমীর ও পরিবেশবিদ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম মহানগরী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খাইরুল বাশার, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুছ ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, নগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এ কে এম ফজলুল হক, সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ শফিউল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহেদুল করিম কচি ও শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান।