শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
Single Top Banner

ছাতক এলজিইডি অফিসে ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’ 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় বর্তমানে ঘুষ ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে— এমন অভিযোগ উঠেছে। এই দুর্নীতির মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক মো. রিয়াজ মিয়া। একসময় পিয়ন পদে চাকরি শুরু করা এই কর্মচারী এখন এলাকায় পরিচিত ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’ নামে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিয়াজ মিয়া প্রায় এক যুগ ধরে ছাতক এলজিইডি অফিসে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে প্রায় আট বছর তিনি পিয়ন পদে ছিলেন। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি অফিস সহকারী হিসেবে পদোন্নতি পান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তিন বছর পূর্ণ হলে অন্যত্র বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক হলেও রিয়াজ নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরে একই কর্মস্থলে বহাল রয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তিনি নিজের বদলি ঠেকিয়ে রেখেছেন। স্থানীয়দের দাবি, রিয়াজ মিয়া প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার ও অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে একটি ‘দুর্নীতিবান্ধব সিন্ডিকেট’ গড়ে তুলেছেন।

সরকারি নথিপত্র গোপনে ঠিকাদারদের সরবরাহ, বিল অনুমোদনে ঘুষ আদায়সহ নানা অনিয়মে সরাসরি জড়িত রিয়াজ মিয়া— এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ঠিকাদার। তাদের দাবি, প্রতিটি প্রকল্পের বিল পাস করাতে হলে রিয়াজের নির্দেশে শতকরা দুই শতাংশ ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে ফাইল আটকে রাখা বা বিল স্থগিতের ভয় দেখিয়ে ঠিকাদারদের হয়রানির শিকার হতে হয়, ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হয় এবং কাজের মানও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

একজন ঠিকাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“রিয়াজ ছাড়া এই অফিসে কোনো কাজ হয় না। বিল পাস থেকে ফাইলের অগ্রগতি— সব কিছুতেই তার হস্তক্ষেপ। নিজেকে সে প্রকৌশলী হিসেবেই উপস্থাপন করে।”

অফিসের ভেতরের একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিয়ন থেকে অফিস সহকারী পদে উন্নীত হওয়ার পর রিয়াজের আচরণে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে তিনি সবাইকে সম্মান করতেন, এখন অহংকারপূর্ণ আচরণে অফিসে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছেন।

স্থানীয়ভাবে আলোচিত বিষয় হলো— ছাত্রলীগ-ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের সঙ্গে রিয়াজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঠিকাদারের ফাইল ও বিল প্রক্রিয়ায় তিনি বিশেষ সুবিধা দেন এবং এর বিনিময়ে নিয়মিত আর্থিক লেনদেন হয়।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এক কর্মচারীর এত দীর্ঘদিন একই স্থানে বহাল থাকা এবং ঘুষ–দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা প্রশাসনিক তদারকির ব্যর্থতার স্পষ্ট প্রমাণ। তারা দ্রুত তদন্ত করে রিয়াজ মিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,“সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। আমার নিয়ন্ত্রণে অফিস থাকার প্রশ্নই আসে না।”

ছাতক উপজেলা এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন,“এটা আমার কোনো বিষয় নয়। আমি নতুন যোগ দিয়েছি। সে অনেকদিন ধরে এখানে আছে, তাই মানুষ ভাবে অফিসটা তার নিয়ন্ত্রণে। কর্তৃপক্ষ চাইলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

Single Sidebar Banner
  • সর্বশেষ
  • পঠিত