শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
Single Top Banner

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সভা বক্তারা

জুয়ার অর্থ লেনদেনকারী এমএফএস অ্যাকাউন্টের তালিকা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :

বিভিন্ন ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপস ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্রুত বাড়ছে অনলাইন জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি কার্যক্রম। এতে বিদেশে অর্থ পাচারের পাশাপাশি তরুণ সমাজ বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে অনলাইনে জুয়া ও বেটিং বন্ধে করণীয় নির্ধারণে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মোবাইল অপারেটর এবং মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “জুয়ার অর্থ লেনদেনকারী এমএফএস অ্যাকাউন্টগুলোর তালিকা তৈরি হচ্ছে। ইতোমধ্যে মে মাস থেকে ৪ হাজার ৮২০টি মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী অ্যাকাউন্ট ও ১ হাজার ৩৩১টি পোর্টাল বন্ধ করা হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, একটি সাইট বন্ধ করলে অপরাধীরা একাধিক নতুন সাইট খুলছে এবং এমএফএস অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়ার পর তারা অ্যাপভিত্তিক পদ্ধতিতে জুয়া চালু করছে। এজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদেরও প্রযুক্তিগতভাবে সক্রিয় হতে হবে। পপ-আপ ব্লক করার জন্য ট্রাফিক ক্লাসিফায়ার ডিজাইন করা এবং এমএফএস প্রতিষ্ঠানে ‘অ্যাকটিভ ক্রলার’ ব্যবহার করে জুয়া শনাক্তের পরামর্শ দেন তিনি।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, আগামী নভেম্বরে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (NEIR) চালু হবে, যা মোবাইল অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “তরুণদের মানসিকতার পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেই জুয়া প্রতিরোধ সম্ভব।”

বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. এমদাদ উল বারী (অব.) জানান, NEIR চালু হলে মোবাইলে নতুন সিম চালু করতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হবে, ফলে অপরাধীদের ব্যবহার সীমিত হবে। একই সঙ্গে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো পুনঃপুন ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতারণা রোধ করতে পারবে।

মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা বলেন, অনলাইন জুয়া, পর্নোগ্রাফি ও বেটিং সাইট বন্ধে তারা এনটিএমসির সহায়তায় সক্ষমতা বাড়াচ্ছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য সাইট বন্ধ করা হয়েছে, তবে এগুলোর নিরাপত্তা স্তর জটিল হওয়ায় মাল্টিলেয়ারে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

বাংলাদেশ ফিনান্সিয়াল ইনটেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রতিনিধিরা জানান, এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজার এমএফএস নম্বর বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া এনআইডি ও সিম ম্যাচিংয়ের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের জন্য বিটিআরসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রস্তাব দেন তারা।

ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) প্রতিনিধিরা জানান, তাদের সহায়তায় এখন পর্যন্ত ১২৩টি জুয়ার অ্যাপ এবং অসংখ্য ওয়েব লিংক/ইউআরএল ব্লক করা হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনের ধারা প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়।

ডিজিএফআই প্রতিনিধি বলেন, কালো তালিকাভুক্ত সিম শনাক্তে মোবাইল হ্যান্ডসেটের আইএমইআই ব্ল্যাকলিস্ট সিস্টেম চালুর মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

এনএসআই প্রতিনিধি জানান, দেশীয় চক্রের পাশাপাশি দুবাই ও মালয়েশিয়া থেকে একটি চক্র জুয়া ও বেটিং পরিচালনা করছে। তারা বিদেশে কলসেন্টার চালিয়ে এসব কার্যক্রম প্রচার করছে। কনটেন্ট শনাক্তে মোবাইল ও আইএসপি অপারেটরদের সক্ষমতা বাড়ানো এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দেন তিনি।

সিআইডি সাইবার পুলিশ সেন্টার এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত দুই মাসে অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত ২ হাজারের বেশি সিম সনাক্ত এবং ৬০০ সাইট ও ৫০টি অ্যাপ চিহ্নিত করা হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব উপস্থিত প্রতিনিধিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব নীতিনির্ধারণী ও কারিগরি টিমকে সঙ্গে নিয়ে শিগগির অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

Single Sidebar Banner
  • সর্বশেষ
  • পঠিত