বালুমহল ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধের জের ধরেই চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী ও বিএনপি কর্মী আব্দুল হাকিমকে (৫৫) হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত চারজনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য পেয়েছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো-মো. মারুফ, মো. আব্দুল্লাহ খোকন (প্রকাশ ল্যাংড়া খোকন), মো. সাকলাইন হোসেন ও জিয়াউর রহমান। তাদের প্রত্যেকের বাড়ি রাউজান উপজেলায়।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী মডেল থানাধীন মদুনাঘাট এলাকায় প্রাইভেট কারে থাকা ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিমকে গুলি করে হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। মূলত রাউজান থানাধীন বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ইতিমধ্যে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশ যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন ৭ অক্টোবর সকালে নিহত হাকিম নিজ প্রাইভেটকার যোগে হামিম এগ্রো ফার্মে যান। বিকেলবেলা চট্টগ্রাম শহরে ফেরার পথে মদুনাঘাট ব্রিজের পশ্চিম পাশে পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলযোগে তার গাড়ির সামনে এসে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাকিম গুরুতর আহত হয়ে পরে মৃত্যুবরণ করেন।
ঘটনার পরপরই চট্টগ্রাম জেলা গোয়েন্দা শাখা ও হাটহাজারী থানা পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ৩১ অক্টোবর রাউজান থানাধীন বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীব উল্লাহ পাড়া এলাকা থেকে মো. আব্দুল্লাহ খোকন (প্রকাশ ল্যাংড়া খোকন)-কে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে খোকন হাকিম হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
খোকনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২ নভেম্বর রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চৌধুরীহাট এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত মো. মারুফকে গ্রেফতার করা হয়। মারুফ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রের অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে, যা মো. সাকলাইন হোসেনের হেফাজতে ছিল বলে জানায়।
পরবর্তীতে ৪ নভেম্বর রাতে হাটহাজারী থানার একটি বিশেষ টিম রাউজান থানাধীন নোয়াপাড়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. সাকলাইন হোসেনকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দেশীয় তৈরি একনলা বন্দুক, একটি এলজি ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিদের বক্তব্য এবং স্থানীয়সুত্রে জানা যায়, রাউজান থানাধীন বালুমহলের নিয়ন্ত্রণ ও স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ইতোমধ্যে পুলিশের তৎপরতায় জিয়াউর রহমানসহ মোট ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০-১২ জন আসামির পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। উক্ত হত্যাকান্ডসহ চট্টগ্রাম জেলায় সংঘটিত সকল ঘটনায় জড়িত অপরাধীদেরকে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারের জন্য সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া, চৌধুরীহাট ও আশপাশের এলাকায় চেকপোস্ট, পুলিশি টহল, বিশেষ অভিযান এবং রাত্রীকালীন সাঁড়াশি তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি চট্টগ্রাম জেলা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, সকল প্রকার সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমন ও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৫ আগস্টের পর রাউজান উপজেলায় ১৭ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এরমধ্যে ১২ জন রাজনৈতিক বিভাজনের কারনে খুন বলে জানিয়েছে পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন।


