বৃহস্পতিবার, ৬ নভেম্বর ২০২৫
Single Top Banner

ডাকসুর ইতিহাসে রেকর্ড: ভিপি পদে ২০ জনের প্রাথমিক শিক্ষা মাদ্রাসায়

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ ছয় বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। বিভিন্ন সংগঠন ও প্যানেল তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে। নির্বাচনী প্রচারণা জমে ওঠায় ক্যাম্পাসে নতুন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক বৈধ প্রার্থী তালিকা অনুযায়ী এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মোট ৪৬২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে সহসভাপতি (ভিপি) পদে সর্বাধিক ৪৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, যা ডাকসুর ইতিহাসে একক পদে সর্বাধিক প্রার্থীর রেকর্ড।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের মধ্যে প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থীর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায়। শুধু ভিপি পদেই নয়, কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রার্থী রয়েছেন যারা অতীতে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন। বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসুর দীর্ঘ ইতিহাসে এতো সংখ্যক মাদ্রাসাশিক্ষিত প্রার্থীর অংশগ্রহণ এবারই প্রথম, যা ছাত্র রাজনীতির ধারা ও সামাজিক বাস্তবতার এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দেয়।

ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থী ও শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবু সাদিক কায়েম, ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের আহ্বায়ক আব্দুল কাদের, স্বতন্ত্র প্যানেল ‘ডিইউ ফার্স্ট’-এর প্রার্থী জামালুদ্দীন খালিদ, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইয়াসিন আরাফাতসহ অনেকে।

ক্যাম্পাসজুড়ে শিক্ষার্থীদের আলোচনায় উঠে এসেছে কিছু প্রার্থীর সক্রিয় ভূমিকা। বিশেষ করে আবিদুল ইসলাম খান ও আবু সাদিক কায়েমকে নিয়ে আলোচনা বেশি। শিক্ষার্থীরা বলছেন, জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণঅভ্যুত্থানে তাদের সরব উপস্থিতি জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জামালুদ্দীন খালিদও নিরপেক্ষ ভূমিকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন।

প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে অনেকেই জানান, অতীতে মাদ্রাসা শিক্ষার পরিচয়ের কারণে নানা ধরনের বৈষম্য ও কটূক্তির শিকার হতে হয়েছে তাদের। তবে জুলাই বিপ্লবের পর পরিস্থিতি বদলেছে। আবু সাদিক কায়েম বলেন, এখন ডাকসু সব শিক্ষার্থীর অভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেখানে পরিচয়ের চেয়ে যোগ্যতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আব্দুল কাদেরের মতে, একসময় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হতো, কিন্তু এখন পরিবেশ অনেকটাই বদলে গেছে। ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রার্থী ইয়াসিন আরাফাত মনে করেন, এই অংশগ্রহণ আগামীর নেতৃত্বে বৈচিত্র্য আনবে। ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লার মতে, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নতুন কিছু নয়; আগে তারা পরিচয় গোপন রাখতেন, কিন্তু এখন খোলামেলা অংশ নিচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ আগস্ট দুপুর ১টা পর্যন্ত। চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে ২৬ আগস্ট বিকেল ৪টায়। ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৯ সেপ্টেম্বর এবং সেদিনই ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হলে বাইরে আটটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ৩৯ হাজার ৭৭৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০ হাজার ৮৭১ জন এবং ছাত্রী ১৮ হাজার ৯০২ জন।

ডাকসুর নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন প্যানেল ইশতেহার প্রকাশ ও প্রচারণায় ব্যস্ত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মাদ্রাসা শিক্ষিত প্রার্থীদের বিপুল অংশগ্রহণ ছাত্ররাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করছে। এটি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে দেশের উচ্চশিক্ষায় বৈচিত্র্যময় পটভূমির শিক্ষার্থীরা ক্রমশ মূলধারার নেতৃত্বে নিজেদের অবস্থান শক্ত করছে।

Single Sidebar Banner
  • সর্বশেষ
  • পঠিত