বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৩২তম ও ৩৩তম ব্যাচের চার শতাধিক প্রভাষক দীর্ঘ ১২ বছর চাকরিতে থেকেও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। এতে করে সামাজিক, মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি গুণগত শিক্ষাও ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। অবিলম্বে পদোন্নতির ব্যবস্থা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।
৩৩তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকরা ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরির এক যুগ পার হলেও প্রায় ৩৫০ জন প্রভাষক এখনো জীবনের প্রথম পদোন্নতির মুখ দেখেননি। অথচ একই ব্যাচের অন্যান্য ২৪ ক্যাডারের সদস্যরা ইতিমধ্যেই পদোন্নতি পেয়ে দ্বিতীয় ধাপের অপেক্ষায় আছেন। শুধু ৩৩তম ব্যাচ নয়, ৩২তম ব্যাচেরও প্রায় ৫৪ জন কর্মকর্তা বিষয়ভিত্তিক বৈষম্যের কারণে পদোন্নতি পাননি। সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পর্যায়ে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তার সংখ্যা প্রায় ১,২২৭ জন। কিন্তু দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে কোনো পদোন্নতি কার্যক্রম চালু নেই। সর্বশেষ চলতি বছরের গত ৪ জুন অনুষ্ঠিত ডিপিসি বৈঠকেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।
দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আত্তীকৃত শিক্ষকদের মামলা পদোন্নতি প্রক্রিয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আদালতের পর্যবেক্ষণে পদোন্নতি বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা নেই। মাউশি এবং বিসিএস সাধারণ শিক্ষা এসোসিয়েশনের সূত্র বলছে, আসল সমস্যা মামলা নয়, বরং পদোন্নতির সংখ্যা নিয়ে মতভেদ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শূন্যপদ বিবেচনায় সীমিত পদোন্নতি দিতে চায়, অন্যদিকে এসোসিয়েশন তা মানতে নারাজ। বর্তমানে প্রভাষক পর্যায়ে শূন্যপদ রয়েছে ৪৩৬টি। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ রিজার্ভ মিলিয়ে পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে ১,০০০ থেকে ১,২০০ জনের। অতীতে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়ার নজির থাকলেও এবার বিষয়টি অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
৩৩তম বিসিএসের পদোন্নতি বঞ্চিত সদস্যরা জানিয়েছেন, প্রায় ৪০ দিন ধরে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি এবং এসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে যাচ্ছেন। কিন্তু কোনো ইতিবাচক অগ্রগতি না হওয়ায় তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দাবি, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই পদোন্নতি কার্যকর করতে হবে। অন্যথায় ৩৩তম বিসিএসের ৯৬০ জন সদস্য (পদোন্নতিপ্রাপ্ত ও বঞ্চিত নির্বিশেষে) এসোসিয়েশনের সদস্যপদ ত্যাগ করবেন এবং আসন্ন নির্বাচন বর্জন করবেন। একই সঙ্গে তারা মাউশিতে অবস্থান, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।
২০১৪ সালে যোগদান করা ৩৩তম বিসিএসের মধ্যে ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ সালে প্রায় ১৬০ জন প্রভাষক পদোন্নতি পান। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে পদোন্নতি পান আরও প্রায় ৪৫০ জন। কিন্তু এখনো প্রায় ৩৫০ জন প্রভাষক পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। একইভাবে ৩২তম ব্যাচের প্রায় ৫৪ জন কর্মকর্তা পদোন্নতি পাননি। দীর্ঘদিনের এ বৈষম্যকে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ইতিহাসে এক চরম নজির বলে উল্লেখ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকরা বলছেন, এক যুগ পার হলেও স্বাভাবিক পদোন্নতি না পাওয়া বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের জন্য চরম হতাশার বিষয়। তারা আশা করেছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষা ক্যাডারে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। কিন্তু বাস্তবে পদোন্নতির মতো একটি স্বাভাবিক বিষয়ও এখন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।


