কক্সবাজারে ঈদগাঁও নদী থেকে কথিত ভিলেজারের নেতৃত্বে অবৈধ বালি উত্তোলনের মহোৎসব চললেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সম্প্রতি বালির গর্তে পড়ে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যুর পরও এ অপকর্ম অব্যাহত থাকায় এলাকাবাসীর মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড গজালিয়ার রাজঘাট এলাকার ঈদগাঁও নদীতে ড্রেজার-সেলো মেশিন দিয়ে রাতদিন অবৈধ বালি উত্তোলন করছে এলাকার চিহ্নিত বালি সিন্ডিকেট।
স্থানীয়দের অভিযোগ , উপজেলা প্রশাসনের গোচরে নদী থেকে সরকারি ইজারা বিহীন অবৈধ বালি উত্তোলন ও তা গ্রামীন সড়ক দিয়ে ডাম্পার যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের কারণে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত রাস্তাঘাট দিন দিন নষ্ট হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে একদিকে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত রাস্তা ধ্বংস হচ্ছে, অপরদিকে সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ চিহ্নিত এ বালি সিন্ডিকেট বিশেষ দালাল চক্রের মধ্যস্থতায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পরিবেশ বিধ্বংসী এ অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে । যার কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তারা আরো জানান কথিত ভিলেজার হোসেন মাঝি ও মোজাম্মেলের নেতৃত্বে কয়েকজনের সিন্ডিকেট এ অবৈধ বালি উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা পরস্পরকে দায়ী করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
রাজঘাট বিট কর্মকর্তা শাহ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে বালি উত্তোলনের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে তিনি ইতিপূর্বে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করেছেন।
এ বিষয়ে ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মোঃ রাশিক আহসানের সাথে যোগাযোগ করা হলে বলেন, বালি উত্তোলনের স্থান ঈদগাঁও নদীটি যেহেতু সরকারি খাস জায়গা, সেহেতু তিনি বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিমল চাকমার সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জানান ,অবৈধ বালি উত্তোলনের তথ্য জেনে তিনি সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে অভিযানে গিয়ে উক্ত স্থানে কাউকে পাননি। হয়ত অভিযানের সংবাদ পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য গত ১০ সেপ্টেম্বর উক্ত এলাকায় হোসেন মাঝির অবৈধ বালি উত্তোলনের গর্তে পড়ে মোহাম্মদ সাগরের কন্যা তিন বছর বয়সি শিশু মুনতাহার মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ।
মৃত্যু পরবর্তী নিহতের পিতার অভিযোগের ভিত্তিতে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। অভিযুক্ত ব্যক্তি ক্ষমতা ও অর্থের দাপটে নিহতের পিতাকে ম্যানেজ করে দুই দিন লাশ মর্গে রেখে পরে ময়না তদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। এর পূর্বেও একই এলাকার আরেকটি বালির গর্তে পড়ে অপর এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।
এলাকাবাসী প্রশাসন দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি এলাকায় জননিরাপত্তা ও পরিবেশ-সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবী জানিয়েছেন।