শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
Single Top Banner

যানবাহনের গতিসীমা বিষয়ে প্রথমবারের মতো মাস মিডিয়া ক্যাম্পেইন উদ্বোধন

নিজস্ব প্রতিবেদক :

নিরাপদে গাড়ি চালানোর অন্যতম শর্ত হলো গতিসীমা মেনে চলা। গতিসীমা মেনে চললে জীবন বাঁচবে। সড়ক নিরাপত্তায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সামনে রেখে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) প্রথমবারের মতো যানবাহনের গতিসীমা বিষয়ে মাস মিডিয়া ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেছে।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে চসিক সম্মেলন কক্ষে এই ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি কম্পিউটারে ক্লিক করে ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পেইন উদ্বোধন করেন এবং গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়ে দুটি ভিন্ন পোস্টার উন্মোচন করেন।

এই ক্যাম্পেইনের প্রচারণা উপকরণ ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিআইজিআরএস)-এর আওতায় জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরি সহায়তায় নির্মিত হয়েছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নিরাপদে গাড়ি চালানোর অন্যতম শর্ত হলো গতিসীমা মেনে চলা। এটি মানলে জীবন বাঁচবে। আমরা চট্টগ্রামে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। চসিক সড়ক নিরাপত্তায় ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে একযোগে কাজ করছে এবং এই উদ্যোগকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অব্যাহত রাখবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে নগরের রাস্তায় ব্যাটারি চালিত রিকশা অনেক বেড়ে গেছে, যেগুলোর গতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এসব অনিয়ন্ত্রিত যান সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ায়। জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আমরা ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইভস’—অর্থাৎ ‘নিরাপদে গাড়ি চালান, জীবন বাঁচান’—স্লোগান ব্যবহার করছি। জীবন বাঁচানোর এই ধরনের কাজ আমরা অব্যাহত রাখব।

চসিক ও সিএমপির যৌথভাবে প্রকাশিত রিপোর্টের তথ্য উল্লেখ করে মেয়র জানান, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীতে ৩৬২টি রোড ক্র্যাশে ২৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ১১ শতাধিক। ২০২৪ সালের ডেটা বিশ্লেষণ করে শিগগিরই নতুন রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে, যা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজে লাগবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) লিয়াকত আলী খান। তিনি বলেন, নগরীতে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগে পুলিশ কাজ করছে। চসিকের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত এই ক্যাম্পেইন চালকদের গতিসীমা মেনে চলতে উৎসাহিত করবে।

চট্টগ্রামে সড়ক নিরাপত্তায় বিআইজিআরএস-এর কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা করেন এনফোর্সমেন্ট কোঅর্ডিনেটর কাজী হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বিশ্বের ২৭টি শহরে এই কর্মসূচির আওতায় রোড ক্র্যাশজনিত অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্ব কমাতে কাজ চলছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ৫ শতাংশ গতি কমালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে ৩০ শতাংশ। গতি যত বাড়ে, দুর্ঘটনার ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতিও তত বৃদ্ধি পায়। তাই গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ এখন বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।

ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কারিগরি উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম সুজন জানান, এই ক্যাম্পেইনের আওতায় ৩০ সেকেন্ড, ৪৫ সেকেন্ড, ১ মিনিট ও ৯০ সেকেন্ড দৈর্ঘ্যের ভিডিওচিত্র তৈরি করা হয়েছে, যা ওয়েবসাইট, ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নগরের ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রচার করা হবে। ভিডিওচিত্রে রোড ক্র্যাশে নিহত তরুণ সংগঠক ও রাজনীতিক আরিফুল ইসলাম-এর সহধর্মিণী রেবেকা সুলতানা নীলা অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি তাঁর স্বামী ও সন্তানের পিতা হারানোর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সবার প্রতি গতিসীমা মেনে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

সড়কের পাশে স্থাপনের জন্য দুটি ভিন্ন ডিজাইনের পোস্টারও তৈরি করা হয়েছে, যাতে লেখা রয়েছে—“গতিসীমা মেনে গাড়ি চালান, জীবন বাঁচান।” এই প্রচারণা উপকরণ বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) মাধ্যমেও প্রচার করা হবে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর রাতে ঢাকার সড়কে দ্রুতগতির ট্রাকের চাপায় আরিফুল ইসলাম (৪২) ও তাঁর বন্ধু সৌভিক অর্জুন (৪৪) নিহত হন। তাঁদের স্মৃতিতেই এ ক্যাম্পেইনের আবেগময় ভিডিওচিত্র নির্মাণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিআরটিএ, সিএমপি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), ইপসা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

Single Sidebar Banner
  • সর্বশেষ
  • পঠিত