খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকায় ইউপিডিএফ (প্রসিত বিকাশ খীসা/মূল) এর নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে সেনাবাহিনী। গত ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির রামসু বাজার এলাকায় ইউপিডিএফ সশস্ত্র সদস্যদের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে তিন পাহাড়ি যুবক নিহত হওয়ার পর পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকাগুলোয় দীর্ঘমেয়াদি অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।
প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যে জানা যায়, ওই ঘটনায় ইউপিডিএফের সশস্ত্র সদস্যরা খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকার বিভিন্ন পাড়া থেকে এসে রামসু বাজার এলাকায় সেনা সদস্য ও সাধারণ জনগণের ওপর গুলি চালায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনী বর্মাছড়ি এলাকায় অভিযান শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসেবে একটি টহল দল বন বিভাগের সংরক্ষিত খিরাম বনাঞ্চলের একটি খালি এলাকায় অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে, যা বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
সেনা অভিযানের কারণে ইউপিডিএফ সশস্ত্র দলগুলো দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে দুর্গম কালাপাহাড় ও ফটিকছড়ির গভীর পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নেয়। তবে নিজেদের অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ও সেনা অভিযানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে ইউপিডিএফ স্থানীয় জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগানোর কৌশল নেয়।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপনের বিরোধিতা করে ইউপিডিএফ এলাকাবাসী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের জোরপূর্বক জমায়েত করে। তারা বেসটির জমিকে বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহারের অংশ দাবি করে আন্দোলন শুরু করে এবং দেশ-বিদেশে অনলাইন প্রোপাগান্ডা চালায়। পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করে জনগণকে উত্তেজিত করে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে প্ররোচিত করা হয়।
২৪ অক্টোবর ইউপিডিএফের নেতৃত্বে প্রায় এক হাজার লোক অস্থায়ী পেট্রোল বেসের সামনে সমবেত হয় এবং সেনা সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। তারা সেনাবাহিনীর কাছে স্মারকলিপি দেয়, তবে নিজেদের দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
অভিযানে জড়িত সূত্র জানায়, বর্মাছড়ি এলাকা দীর্ঘদিন ধরে ইউপিডিএফের প্রভাবাধীন। নিকটবর্তী স্থানে স্থায়ী সেনা ক্যাম্প না থাকায় তারা ওই এলাকায় সশস্ত্র ঘাঁটি গড়ে তোলে এবং অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহার করে।
গোয়েন্দা বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, ইউপিডিএফ নেতা প্রসিত বিকাশ খীসা তার সহযোগী অর্কিড চাকমাকে বর্মাছড়িতে একটি বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দেন, যাতে সেনা অভিযানের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২৭ থেকে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ১০–১৫ হাজার মানুষকে জোরপূর্বক ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাধ্য করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে সহায়তার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের এক অধ্যাপক এবং গুইমারার জ্যোতিমারা বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের এক ধর্মীয় নেতাকেও যুক্ত করা হয়।
এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ আর্য কল্যাণ বিহারের নামে ২৯ অক্টোবর একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রচারণা চালায়। অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করা হয়। বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় “মৃতদেহের রাজনীতি” (Politics of Body Bags) ও “ঘৃণার রাজনীতি” (Hate Politics) পুঁজি করে পার্বত্য অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে ইউপিডিএফ নেতৃত্ব।
২৮ সেপ্টেম্বর রামসু বাজারে ইউপিডিএফের গুলিতে তিন পাহাড়ি নিহত হওয়ার ঘটনাকেও তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে সংঘাত উসকে দিয়ে পার্বত্য অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্কিত করে তোলা।
২৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ও গণমাধ্যমের উপস্থিতিতে ইউপিডিএফের দাবির পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপনের আহ্বান জানানো হলে তারা কোনো দলিল বা প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়। সেনাবাহিনী পরবর্তীতে নিশ্চিত করে যে, অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতেই স্থাপিত হয়েছে, বৌদ্ধ বিহারের জমিতে নয়।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাটিকে খাগড়াছড়ির বিতর্কিত ধর্ষণ ইস্যুর মতোই ধর্মীয় আবেগকে পুঁজি করে পাহাড় অস্থিতিশীল করার পুনরাবৃত্তি বলে উল্লেখ করেছে সেনা সূত্র। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সবসময় পার্বত্য অঞ্চলের সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং অভিযানের সময় এই নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করে।
ইউপিডিএফের পরিকল্পিত উসকানি ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের কারণে সেনা সদস্যরা সর্বোচ্চ সংযম, ধৈর্য ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। সেনাবাহিনীর সীমাবদ্ধতাকে পুঁজি করে ইউপিডিএফ নেতৃত্ব পার্বত্য অঞ্চলে সংঘাত উসকে দিতে সচেষ্ট, তবে তাদের এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আশঙ্কা এড়াতে সেনাবাহিনী বর্মাছড়ির অস্থায়ী পেট্রোল বেস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে পার্বত্য অঞ্চলে রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইউপিডিএফসহ সকল সশস্ত্র গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় অটল ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। -সূত্র-আইএসপিআর


