চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের গৃহকর নির্ধারণে অনিয়মের অভিযোগে দায়িত্বে গাফিলতির কারণে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। সোমবার মেয়রের স্বাক্ষরে এ নোটিশ জারি করা হয়। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে কোনো মেয়রের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা। নোটিশের অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালককে পাঠানো হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, ২০১৭–১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বিভাগ দুটি প্রতিষ্ঠানের গৃহকর নির্ধারণের সময় গুরুতর অনিয়ম করে। প্রথম প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক মূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানের ২৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। পরবর্তীতে সংখ্যার “২” ঘষে ফেলে যথাক্রমে ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা এবং ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা দেখানো হয়। এতে করপোরেশন বিপুল অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়।
মেয়রের জারি করা নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, গৃহকর নির্ধারণে অনিয়মের বিষয়টি ২০২৩ সালের ২৮ মে কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করা হয়। এরপর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্বে থাকলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের ব্যবস্থা নেননি এবং সংশ্লিষ্ট দোষীদের চিহ্নিত করতে কোনো পদক্ষেপও নেননি। এতে করপোরেশনের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে, যা দায়িত্বে গাফিলতির প্রমাণ বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ছুটিতে গেলে সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। প্রশিক্ষণ শেষে গত ২২ অক্টোবর তিনি মেয়রের বরাবর যোগদানের আবেদন করেন, তবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানা গেছে।
মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, শেখ তৌহিদুল ইসলাম তিন বছর দায়িত্বে থেকেও গৃহকর অনিয়মের তদন্ত ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। ওই সময় কমিটি গঠন করা হলেও প্রতিবেদন জমা হয়নি, এমনকি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত কমিটিকে চাপও দেননি। অথচ ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই তদন্ত সম্পন্ন করেন। এতে স্পষ্ট হয় যে, তদন্ত বিলম্বে তাঁর গাফিলতি ছিল। এজন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন আমি দায়িত্বে ছিলাম না। বিষয়টি নজরে আসার পর অতিরিক্ত জেলা জজ পদমর্যাদার আইন কর্মকর্তাকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দিতে আমি একাধিকবার তাগাদা দিয়েছি, সেটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সবাই জানেন। তাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল না হলে তার দায় কমিটির প্রধানের, আমার নয়। আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ কেন দেওয়া হলো, তা বোধগম্য নয়।”
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, অনিয়মের অভিযোগটি চট্টগ্রাম নগরের মধ্যম হালিশহরের এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এবং পতেঙ্গার লালদিয়ার চরে অবস্থিত ইনকনট্রেড লিমিটেডের গৃহকর নির্ধারণ সংক্রান্ত। এই ঘটনায় রাজস্ব বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় করপোরেশনের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। প্রশাসনিক অভিজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় মেয়র ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দুইজনই গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে থাকলেও একে অপরের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়ার নজির সচরাচর দেখা যায় না। তাই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে মেয়রের এই উদ্যোগকে স্থানীয় সরকার প্রশাসনে একটি নতুন দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।


