বাংলাদেশের সামনে অদূর ভবিষ্যতে এক ঐতিহাসিক অধ্যায় অপেক্ষা করছে – ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং জাতির অস্তিত্ব ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। কিন্তু এ পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও অস্ত্রসজ্জিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী শাসনে দেশে গড়ে উঠেছে একটি সুসংগঠিত অস্ত্র ব্যবসার নেটওয়ার্ক। খুন, গুম, চাঁদাবাজি, দখলবাজি থেকে শুরু করে গুপ্ত হত্যা পর্যন্ত সব অবৈধ কর্মকাণ্ডের মূল চালিকাশক্তি ছিল এই অবৈধ অস্ত্র। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অস্ত্র প্রবাহ ছিল ‘ওপেন সিক্রেট’। পাহাড়ি জনপদে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীরা অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও এক বড় হুমকি।
শুধু অবৈধ অস্ত্র নয়, গত এক দশকেরও বেশি সময়ে যাচাই-বাছাই ছাড়াই অসংখ্য বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছিল। এসব লাইসেন্সধারীদের অনেকেই এখনো অস্ত্র জমা দেয়নি। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো গণঅভ্যুত্থানের সময় লুট হওয়া অনেক অস্ত্র আজও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি, যেগুলো জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তি বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন অস্ত্র দেশে ঢোকানোর এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা মনে করি নিঃসন্দেহে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে অবগত রয়েছে। তাই প্রয়োজন এসব লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও অবৈধ অস্ত্রের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও দ্রুত জব্দকরণ। কে বা কারা, কোন প্রভাবশালী সুপারিশে এই লাইসেন্স পেয়েছিল, তা জনসমক্ষে আনাও জরুরি।
আগামী নির্বাচনের পূর্বে দেশের প্রতিটি অঞ্চলে চিরুনি অভিযান চালিয়ে বৈধ-অবৈধ সব অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। শুধু পুলিশ নয়, এ দায়িত্ব সেনাবাহিনীর হাতে অর্পণ করলে অভিযান সফল হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়বে। তবে মনে রাখতে হবে – ঢাকঢোল বাজিয়ে অভিযান চালালে এর কার্যকারিতা শূন্য হয়ে যাবে। মিডিয়ার মাধ্যমে আগাম ঘোষণা দিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা মানে সন্ত্রাসীদের সতর্ক করে দেওয়ার নামান্তর। তাই অভিযানে গোপনীয়তা ও কৌশলগত হঠাৎ আক্রমণই হতে হবে প্রধান কৌশল।
বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে মহানগরীগুলোর ঘনবসতিপূর্ণ বস্তি এলাকাগুলোতে। কারণ সেখানেই অধিকাংশ সন্ত্রাসী, ডাকাত ও অবৈধ অস্ত্রধারীরা নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেয়। পাশাপাশি এলাকা ভিত্তিক চিহ্নিত সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং লিডার এবং গডফাদারদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে।
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা নির্বাচন বানচাল করার জন্য দেশকে অস্থিতিশীল পরিবেশে ঠেলে দিতে তৎপর। এ ষড়যন্ত্রের প্রধান সহায়ক শক্তি হবে অবৈধ অস্ত্র গুলো। জনগণের জন্য হুমকিস্বরূপ যে অস্ত্রগুলো এখনো বাইরে রয়েছে, সেগুলো উদ্ধার করার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দ্রুত নির্দেশনা দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
একটি বিষয় স্পষ্ট – অস্ত্র উদ্ধার অভিযান ছাড়া দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবিলম্বে এ অভিযান শুরু করতে হবে, এবং তা হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও ফলপ্রসূ।
মোঃ মঈনুল আলম ছোটন
আহ্বায়ক – শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা। সাবেক সদস্য (দপ্তরের দায়িত্ব প্রাপ্ত), চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি।